হঠাৎ কাজের মাঝখানে অথবা বিশ্রাম নিচ্ছেন বা খেতে বসলেন, এমন সময় ধুম করে হেঁচকি উঠল। যেটি আর থামছেই না। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিপাকতন্ত্রের সমস্যার কারণে মানুষের হেঁচকি আসে। তখন ভোকাল কর্ড হঠাৎ বন্ধ হয়ে ‘হিক’ শব্দ তৈরি হয়। এটি বেশিক্ষণ থাকলে প্রচণ্ড অস্বস্তি লাগে। আর এমন অস্বস্তিকর একটি বিষয় নিয়ে যদি কেউ ৬৮ বছর কাটিয়ে দেন, তাহলে ব্যাপারটা শুনতে কেমন লাগে বলুন তো!
জোরে হেঁচকি তুলে গিনেস বুকে নাম লেখালেন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের বাসিন্দা কিম্বার্লি উইন্টার। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের মতে, ব্লেন্ডার (৭০-৮৯ ডেসিবল), বৈদ্যুতিক হ্যান্ড ড্রিল (৯০-৯৫ ডেসিবল), এমনকি কিছু মোটরসাইকেলের (১০০-১১০ ডেসিবল) আওয়াজও হার মানবে কিম্বার্লির ঢেঁকুরের কাছে। টানা ৬৮ বছরে এক দিনও হেঁচকি ছাড়া থাকতে পারেননি চার্লস অসবর্ন।
যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা চার্লস অসবর্ন টানা ৬৮ বছর এ সমস্যায় ভুগেছেন। চার্লস পেশায় ছিলেন একজন কৃষক। একদিন খামারের একটি শূকরের ওজন দেখছিলেন। ঠিক সে সময় শুরু হয় তার হেঁচকি ওঠা, যা থেমেছিল ৬৮ বছর পর।
শূকরটি উঁচু করার সময় চার্লস মাটিতে পড়ে যান এবং এর পর থেকেই তার হেঁচকির সমস্যা শুরু হয়। চিকিৎসকরা পরীক্ষার পর জানিয়েছিলেন পড়ে যাওয়ার কারণে তার মস্তিষ্কে একটি রক্তবাহী ধমনি ফেটে গিয়েছে। ১৯২২ সালে শুরু হওয়া হেঁচকি শেষ হয়েছিল ১৯৯০ সালে।
শুরুতে খুব বিরক্তিকর মনে হলেও ধীরে ধীরে এতে অভ্যস্ত হয়ে যান চার্লস। যখন এই সমস্যার শুরু তখন তিনি একেবারেই তরুণ। দুইবার বিয়ে করেছিলেন তিনি। সন্তান ছিল আটজন। পরিবারের সবাই চার্লসের এই হেঁচকিতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলেন চার্লস তার জীবনে ৪২০ মিলিয়নের বেশি বার হেঁচকি করেছেন। হেঁচকি থেকে তার সবচেয়ে দীর্ঘ বিরতি ছিল মাত্র ৫০ ঘণ্টা। সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো সে দিনে ও রাতে প্রতি মিনিটে ২০ থেকে ৪০ বার হেঁচকি দিতেন। তার ঘুম এবং খাওয়ার সময় বেশি সমস্যা হত এজন্য। ঠিকমতো ঘুমাতে পারতেন না এবং খাবারও খেতে পারতেন না।
ঘটনাটি ৯০ দশকের হলেও বিংশ শতাব্দীতে এসে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড তাকে স্বীকৃতি দেয়। হেঁচকি দূর করতে চার্লস অনেক চিকিৎসা করেছেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি। ১৯৯০ সালের একদিন হঠাৎ করেই তার হেঁচকি বন্ধ হয়ে যায়। যেভাবে হঠাৎ শুরু হয়েছিল।