Connect with us

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

রোবোটিক্সে হাতেখড়ি যেভাবে : মো. ফাইয়াজ বিন হাসান

মো. ফাইয়াজ বিন হাসান
ট্রেজারার, রোবোসাস্ট
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট

আমরা যখন কোনো কিছু একটা শুরু করতে যাই, তখন আমাদের বড় কিছু সমস্যা থাকে। কী করবো, কোথা থেকে শুরু করবো, কার থেকে সাহায্য নিব কিছুই বুঝে উঠতে পারি না। এই সমস্যাটা আপনাদের যেমন হয়, আমারও হয়। আমি আমার গল্পটা দিয়েই শুরু করি।
আমি তুলনামূলকভাবে মফস্বল শহর থেকে এসেছি দেখে কলেজে থাকতে রোবোটিক্স সম্পর্কে কোনো ধারনাই ছিল না। ভাবতাম রোবোটিক্স মানেই মানুষের মত দেখতে, হাঁটবে, ঘুরবে সেগুলোই রোবট আর সেগুলো বানাতে লাখ লাখ টাকা লাগে। ২০১৭ সালে যখন ভার্সিটিতে ভর্তি হই, তখন দেখলাম এখানে কিছু মানুষ আছে যারা একটু সিরিয়াস চেহারার আর ওদের সুনাম আছে যে ওরা রোবট বানায়। আমার তো টাকা নাই, কিন্তু আগ্রহ পুরোপুরি ছিল। ওই সিরিয়াস মানুষগুলোর সাথে ঘুরঘুর করা শুরু করলাম আর খেয়াল করলাম। মানুষগুলোর চেহারা সিরিয়াস হলেও বাস্তবে উনারা হাসিখুশি মানুষ। এই হাসিখুশি মানুষগুলোর সাথে থেকেই আমার রোবোটিক্সে হাতেখড়ি। আমি তাদের কাজ দেখতাম আর এটা সেটায় সাহায্য করার চেষ্টা করতাম। সাহায্য করতে করতে হঠাৎ একদিন মনে হলো আমি নিজে কিছু বানাতে পারি নাকি দেখি। একটা আর্ডুইনো আর কিছু যন্ত্রপাতি কিনে দুইটা বন্ধুর সাথে বসে পড়লাম। অনেক খাটনির পর কোনোরকম একটা লাইন-ফলোয়ার রোবট বানিয়ে ফেললাম।
এই গল্প শোনানোর প্রধান কারণ হচ্ছে, আমার মত অনেকেই মনে করে রোবট বানানো বিশাল একটা ঝামেলার কাজ আর অনেক টাকা লাগে। টাকা খরচ হয়, তা সত্যি। কিন্তু শেখা শুরু করতে কয়েকশত টাকা হলেই চলে। চারশত টাকা দিয়ে একটা আর্ডুইনো নামের মাইক্রো-কনট্রোলার, একশত টাকার একটা ব্র্যাডবোর্ড, একশত পঞ্চাশ টাকার একটা মোটর, কয়েকটা এলইডি লাইট, কিছু তার আর রেজিস্টর দিয়েই শুরু করে ফেলা যায়। ইদানিং যন্ত্রপাতিগুলো অনেক সহজলভ্য হচ্ছে এবং যে কেউ ইন্টারনেটে গিয়ে সহজেই অর্ডার করে কিনেও ফেলতে পারবে।
এখন মূল কথা হলো, রোবোটিক্স শিখবো কোথা থেকে? আপনি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় যেখানেই পড়েন না কেন, শেখার প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ইন্টারনেট। গুগল এবং ইউটিউব দুইটাই অসাধারণ জায়গা। যা যা জানতে ইচ্ছা করে সব এ দুটো জায়গা থেকে জেনে ফেলা যায়। আর ওই যে আমার গল্পে রোবট বানাতে পারা কিছু মানুষের কথা বললাম, তারা রোবোটিক্সের হাতেখড়ি দেওয়ার জন্য বুদ্ধি করে অনেকগুলো ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে ছেড়ে দিচ্ছেন। রোবোটিক্স শুরু করার জন্য হালকা প্রোগ্রামিং জানা লাগে। সেটাও খুব সহজে গুগল বা ইউটিউব থেকে শিখে ফেলা যায়।
অন্য সবকিছুর মতই রোবোটিক্স শেখার জন্যও সবচেয়ে জরুরি জিনিস হচ্ছে আগ্রহ ধরে রাখা। আমাদের অনেকেরই এমন হয় যে শুরুতে আগ্রহ অনেক ছিল, কিন্তু যখন একটু ঝামেলায় পড়ি তখন সব আগ্রহ হারিয়ে যায়। এই ক্ষেত্রে একটু ধৈর্য্য ধরতে হয়। নতুন কিছু শিখতে গেলে অনেক জায়গায় আটকাবো, এটাই স্বাভাবিক। আমি নিজে এখনো একদম সহজ সহজ জিনিসে আটকে যাই। তখন আমি হয় আমার পরিচিত কারোর কাছে সাহায্য চাই। এইসব ব্যাপারে লজ্জা-শরম রাখতে নাই। আর সাহায্য করার একেবারে কেউই যদি না থাকে তাহলে গুগল আছে। ওই যে ধৈর্য্য আর আগ্রহের কথা বললাম, ওই দুইটা জিনিস থাকলেই হবে। আর যদি একেবারে আগ্রহ চলে যায় তাহলে অবশ্যই আপনার এমন কিছু করা উচিৎ যেটায় আপনার আগ্রহ অনেক বেশি। রোবোটিক্সেও তো ওই আগ্রহ থেকেই আসা, ঠিক না?
রোবোটিক্স মানে যে শুধু মানুষের মত দেখতে রোবটই বানাতে হবে এমন কোনো কথা নাই। একটা খেলনা গাড়ি যেটা কিছু লজিক ব্যবহার করে নিজে নিজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে, সেটাও কিন্তু একটা রোবট। একটা আর্ডুইনো নেন, কয়েকটা এলইডি দিয়ে ছোট একটা সার্কিট বানাবেন এবং কোডের মাধ্যমে জ্বালিয়ে নিভিয়ে দেখবেন। ব্যাস, শুরু হয়ে গেল আপনার রোবোটিক্সের কাজ। ধীরে ধীরে আরো জটিল জিনিস বানানো শিখবেন। এক সময় হয়তো খুব বড় কিছু করেও ফেলতে পারেন। তখন “আমার লেখা পড়ে মানুষটা রোবোটিক্সে আগ্রহী হয়েছিল” বলে আপনার সাফল্যে হালকা ক্রেডিট নিয়ে ফেলতে পারবো।

স্মার্টফোনের এই যুগে নির্ভরশীলতার ৫ এপ্লিকেশন

More in বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি