বিয়েতে আংটি পরানোর নিয়ম বহু প্রাচীন। কিন্তু বিয়ের এই আংটি হাতের অনামিকা আঙুলেই কেন পরানো হয় সেই কৌতুহল থাকতেই পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক-
আংটির গোল আকৃতির হওয়ার বিশেষ একটি কারণ আছে। কারণটি হলো বৃত্তের কোনো প্রান্ত নেই, অসীম এর যাত্রা। ভালোবাসারও যাতে কোনো প্রান্ত না থাকে, তারই রূপক উপস্থাপন ছিল এর আকারে। প্রাচীন গ্রিক ও রোমানরা বিশ্বাস করতেন, বাঁ হাতের অনামিকা সরাসরি হৃৎপিণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত। যার কারণে তাঁরা এর নাম দিয়েছিলেন ভেনা আমোরিস বা ভালোবাসার ধমনি।
এই বিশ্বাসে অনামিকায় আংটি পরানো হতো। দুটি প্রেমপূর্ণ হৃদয়ের মিলন ঘটত গোলাকার আংটির রূপ ধরে। অবশ্য এই ধমনিতত্ত্বের কোনো বৈজ্ঞানিক সত্যতা পাওয়া যায় না। তাই হৃদয়ঘটিত সংযুক্তির আশাও অবান্তর। চীনা উপকথায় অনামিকা নিয়ে আরেক ধরনের তত্ত্ব আছে।
চীনারা বিশ্বাস করে, হাতের পাঁচ আঙুল আমাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রকাশ করে। এই তত্ত্বের ছোট একটা পরীক্ষাও আছে। আমাদের বুড়ো আঙুল প্রতিনিধিত্ব করে আমাদের বাবা-মাকে। তর্জনী আমাদের সন্তানদের। মধ্যমা আমাদের নিজেকে। অনামিকায় আছে আমাদের জীবনসঙ্গী। কনিষ্ঠায় আমাদের নাতি-নাতনিরা।
এবার দুই হাতে সবগুলো আঙুলের মাথা পরস্পর স্পর্শ করুন। মধ্যমা আমাদের নিজের চিহ্ন, তাই একে ভাঁজ করে ভেতরের দিকে রাখুন যাতে মধ্যমার গাঁট দুটো লেগে থাকে। এবার এক এক করে ওপরে থাকা আঙুলগুলো আলাদা করার চেষ্টা করুন। বুড়ো আঙুল আলাদা করা যায়, অর্থাৎ আমরা বাবা-মায়ের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাব। তর্জনী আলাদা করা যায়, মানে আমাদের সন্তানেরাও সব সময় আমাদের সঙ্গে থাকে না। কনিষ্ঠাও তা-ই, নাতি-নাতনিরাও সারা জীবন পাশে থাকে না।
শুধু পশ্চিমা সংস্কৃতি নয়; অনামিকায় আংটি পরানোর রীতি এখন সারা বিশ্বে সব আঙুল আলাদা করা গেলেও মধ্যমা দুটো ভেতরের দিকে ভাঁজ করে রাখা অবস্থায় কেবল অনামিকা আলাদা করা যায় না। অর্থাৎ সঙ্গীর সঙ্গে থাকতে হবে সারা জীবন।
এ জন্যই অনামিকায় আংটি পরানো হয়। এসবই তত্ত্ব, উপকথা বা নেহাত যুক্তিহীন বিশ্বাস। আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে ভালোবাসা থাকলে, যে হাতের যে আঙুলেই পরেন না কেন, নিশ্চয়ই সুখী জীবন যাপন করবেন।