Connect with us

চিত্রকলা

চিকিৎসকদের পাল্টা প্রশ্ন, রাতে কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা দেয় কে?

যেখানে রোববার থেকে বৃহস্পতিবার নির্দিষ্ট সময়ের পর, শুক্র-শনিবার এবং রাতের বেলা চিকিৎসকই পাওয়া যায় না, সেখানে ওষুধের দোকান কেন খোলা রাখা হবে? হাসপাতালে সংযুক্ত ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার যৌক্তিকতা আমরা দেখি না।

কথাগুলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের। মেয়রের এসব কথার জবাবে চিকিৎসকরা পাল্টা প্রশ্ন রেখেছেন, তাহলে রাতে কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা দেয় কে? মেয়র কি জানেন, ২৪ ঘণ্টাই হাসপাতালে চিকিৎসক থাকে?

চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন (বিডিএফ) বলছে, রাতের বেলা ডাক্তার পাওয়া যায় না বলে মেয়র ফজলে নূর তাপস যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা পুরোপুরি মিথ্যা ও মনগড়া। এই বক্তব্যে চিকিৎসক সমাজ বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ।

বিডিএফ চেয়ারম্যান ডা. মো. শাহেদ রফি পাভেল ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. তাজিন আফরোজ শাহ স্বাক্ষরিত প্রতিবাদলিপিতে মেয়রের ওই বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিও জানানো হয়েছে।

মেয়রের ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ এসেছে চিকিৎসকদের আরেক সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটিজের (এফডিএসআর) কাছ থেকেও। এ সংগঠনটি বলছে, রাতে যদি ডাক্তার পাওয়া না যায়, তাহলে রাতে ঢাকা শহরে কেউ অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসা দেয় কারা? রাতে হাসপাতালগুলোতেই বা কারা চিকিৎসা দেয়? এই শহরের হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতেই শুধু নয়, প্রতিটি ওয়ার্ডে রাতের বেলায় কয়েকজন ডাক্তার ডিউটিতে থাকেন। আইসিইউতে ডাক্তাররা থাকেন। সারা রাত অপারেশন থিয়েটারে ডাক্তাররা রোগীদের জরুরি অপারেশন করেন। সারা রাত গর্ভবতী মায়েদের ডেলিভারি করানো হয়।

প্রতিবাদলিপি পাঠিয়ে মেয়রের উদ্দেশে এফডিএসআর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন বলেছেন, আপনি ঢাকা দক্ষিণকে নিয়মের আওতায় আনবেন ভালো কথা। সে ক্ষেত্রে আপনাদের এলাকা চিহ্নিত করে বলে দেওয়া উচিৎ ছিল কোন কোন এলাকার কোন ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। আপনাদের জানা উচিৎ রাতে কোথায় কোথায় চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় এবং হাসপাতালের আশপাশেসহ কোন কোন এলাকায় ওষুধের দোকান খোলা থাকা উচিৎ।

এসব না থাকলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে জানতে দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শও দেন ডা. মিল্টন।

আরো পড়ুনঃ যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে বহুমুখী পদক্ষেপ প্রয়োজন

এমন একটা দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এরকম উদ্ভট কথাবার্তা যদি আসে, তাহলে বুঝতে হবে এখানে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আমি মনে করি উনার অবস্থান থেকে একটু জেনে-শুনে, যেটা সঠিক, সেটাই বলা উচিত।

বিএসএমএমইউয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান

যা বলছেন ফার্মেসি মালিকরা
রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় ল্যাবএইড হাসপাতালের নিচেই ‘টপ ওয়ান’ নামে একটি ফার্মেসির মালিক মো. কাওসার চৌধুরীর সঙ্গে কথা হলে ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, অসুস্থতার ব্যাপারটা খুবই সেনসিটিভ বিষয়। যে কেউ হঠাৎ করেই অসুস্থ হতে পারে, গুরুতর অসুস্থতার কারণে যেকোনো সময় যেকোনো ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। এ অবস্থায় যদি ফার্মেসি বা ওষুধের দোকান খোলা না থাকে, তাহলে তো রোগীকে বিপদে পড়ে যেতে হতে পারে। এজন্য সরকারি পর্যায়ে থেকে যদি এটা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তাহলে অবশ্যই আরেকটু ভেবেচিন্তে এবং এই সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ নিয়ে করা উচিত।

রাত ১২টার পর ওষুধের দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তকে আপনি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই এই সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। কারণ রাত ১২টার পর যদি কারও জরুরি ওষুধের প্রয়োজন হয় সে কোথায় যাবে? তাহলে সিটি কর্পোরেশন কি রোগীর বাসায় ওষুধ সরবরাহের দায়িত্ব নেবে?

মেডিসিন কর্নার নামে একটি ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতা আখতারুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাত ১২টার পর অসংখ্য রোগী ওষুধের জন্য আমাদের কাছে প্রেসক্রিপশন নিয়ে আসেন। কিছু রোগী এমন আসেন যারা জরুরি প্রয়োজনে নিকটাত্মীয় কোনো চিকিৎসক বা অনলাইনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধের জন্য আসেন। মেয়র হয়তো জানেন না যে, হাসপাতালগুলোর ইমার্জেন্সিতে ২৪ ঘণ্টাই কোনো না কোনো চিকিৎসক থাকেন, তারা যদি কোনো সংকটাপন্ন রোগীকে শেষ রাতে ওষুধ আনার কথা বলে, তাহলে কি ওই রোগীর ওষুধ না খেয়ে মরা ছাড়া কোনো উপায় আছে?

তিনি আরও বলেন, রাত ১২টার পর যারা ফার্মেসি চালায়, তাদের চোখেও ঘুম আসে। তাছাড়া রাতে যে আহামরি বিক্রি হয়, তাও না। আমরা মনে করি ওষুধ বিক্রিও একটা সেবামূলক কাজ, আমরা যদি দোকান বন্ধ করে ঘুমিয়ে যাই, তাহলে শেষ রাতে আসা একজন মুমূর্ষ রোগী যাবে কোথায়? সুতরাং স্বাস্থ্য নিয়ে খামখেয়ালিপনামূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই বারবার ভাবতে হবে।

ওষুধের দোকান বন্ধ থাকবে না : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
ওষুধের দোকান বন্ধে ডিএসসিসির সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে গত ২৫ আগস্ট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্যসেবা হলো জরুরি সেবা। ওষুধের ফার্মেসিও একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। আমরা কোনো হাসপাতালের টাইমিং কমাইনি। আমরা ২৪ ঘণ্টা সেবা বজায় রেখেছি। সব হাসপাতাল তার নিজস্ব গতিতে চলবে। সেখানে সময়টা অপরিবর্তিত থাকবে এবং ওষুধের দোকানের বিষয়ে আমরা কোনো নির্দেশনা দেইনি।

তিনি বলেন, ওষুধের দোকান বন্ধ থাকবে না, এটা খোলা থাকবে। সিটি করপোরেশন যদি এটা নিয়ে কিছু করে থাকে সেটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে করা হয়নি। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলব।

More in চিত্রকলা